ডিজিটাল ডেস্ক:
শিরোনাম: শেনজেন ভিসা পেতে যা করবেন
আলোচক: রহমান মুস্তাফিজ; প্রধান সম্পাদক, আর্ট নিউজ
চিত্রধারণ: আনান মুস্তাফিজ
শব্দধারণ: তৃমা আনালিয়া
গ্রন্থণা ও নির্দেশনা: কাজী তামান্না
দৈর্ঘ্য: ৫৭ মিনিট ১৬ সেকেন্ড
বিস্তারিত তথ্য:
সভ্যতা আর আভিজাত্যের মিশেলে গড়ে উঠেছে ইউরোপ। অভিবাসী হতে কিংবা ভ্রমণের জন্য আদর্শ জায়গা ইউরোপ। অগণিত গন্তব্য, নান্দনিক সৌন্দর্যের ইউরোপ হাতছানি দেয় পর্যটকদের। ফলে ইউরোপে প্রদিতদিনই বাড়ছে পর্যটকের সংখ্যা।
ইউরোপ তথা শেনজেনভূক্ত দেশগুলোতে পর্যটক হিসেবে বা কোনোও কাজে গেলে একজন ব্যক্তি একটানা সর্বোচ্চ ৯০ দিন অবস্থান করতে পারেন। তবে সেজন্য প্রয়োজন হয় শেনজেন ভিসার। এক ভিসাতেই বেড়ানো যাবে ২৬টি দেশে। এই ২৬টি দেশের একটি থেকে আরেকটিতে ভ্রমণকে ধরা হয় ডমেস্টিক (অভ্যন্তরীণ রুট) হিসেবে। ফলে ভ্রমণপিয়াসীদের কাছে এই শেনজেন ভিসা বেশ লোভনীয়।
শেনজেন ভিসার আবেদন প্রক্রিয়া একটু কষ্টসাধ্য। বিশেষত নির্ভুলভাবে আবেদনের কাগজপত্র তৈরি করা। আবার নির্ভুলভাবে সব কাগজপত্রসহ জমা দিলেই যে ভিসা পাওয়া যাবে এমনটাও নয়। প্রত্যাখ্যাত হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। আর এ কারণেই অনেকে ট্রাভেল বা ভিসা এজেন্ট কিংবা ট্যুর অপারেটরের শরণাপন্ন হন অনেকে। এজেন্টের কাছে গেলে ভ্রমণেচ্ছুদের খরচটাও বেড়ে যায়। তাই সঠিক নিয়ম জানা থাকলে আদেন করতে পারেন নিজেই।
শেনজেন ভিসা কারা দিচ্ছে:
বর্তমানে শেনজেন ভিসা দিয়ে থাকে ইতালি, জার্মানি, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, বেলজিয়াম, অস্ট্রিয়া, চেক রিপাবলিক, ডেনমার্ক, এস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড, গ্রিস, হাঙ্গেরি, আইসল্যান্ড, লাটভিয়া, লিকটেনস্টাইন, লিথুনিয়া, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা, স্লোভাকিয়া ও স্লোভেনিয়া।
আবেদন করার আগে প্রস্তুতি নিন:
শেনজেন ভিসার আবেদন করুন অন্তত ৩/৪ মাসের প্রস্তুতি নিয়ে। আবেদন করার আগে পরিকল্পনা করুন কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় রেখে। মনে রাখবেন-
১. আপনি যদি ভ্রমণের উদ্দেশে যেতে চান তাহলে কোথায় কোথায় যাবেন সেইসব স্থান নির্ধারণ করুন। কাছাকাছি দেশ বা শহর হলে সময় বাঁচবে, বাঁচবে খরচও।
২. রিটার্ন এয়ার টিকেট কম টাকায় বুকিং দেয়া সম্ভব। সেক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি টিকেট বুকিং ওয়েবসাইট দেখুন। ছুটির দিন ছাড়া অন্য কোনো দিন বেছে নিন, এতে খরচ কম পড়বে। মনে রাখবেন, ভিসা আবেদনের জন্য আপনার একটি টিকেট বুকিংয়ের কপি জমা দিতে হবে। অনলাইনে সিট বুক করবেন কিন্তু টাকা পরিশোধ করবেন না। ভিসা পাওয়ার পরই টিকেট কিনবেন।
৩. বিমান টিকেটের মত হোটেল বুকিংয়েরও কপি লাগবে। এক্ষেত্রেও হোটেল রুমের আগাম বুকিং দিন। বেছে নিবেন সেই সব হোটেল যেখানে অগ্রিম টাকা দিতে হবে না। অনলাইনে তেমন হোটেল না পেলে টাকা ফেরতযোগ্য অপশন বেছে নিন। কারণ, আপনি ভিসা পাবেন কিনা সেই বিষয়ে আপনি নিশ্চিত নন। তাছাড়া ভিসা পেলেও আপনার ভ্রমণের তারিখ বা পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনতে হতে পারে। তাই পুরনো বুকিং বাতিল করা যাবে এমন হোটেল বেছে নিন।
৪. পরিবারের সাথে গেলে দুই বা তিন তারকা মানের হোটেল বুকিং দিন। এতে সুযোগ সুবিধার পাশাপাশি সকালের নাস্তার টাকা সাশ্রয় হবে। বন্ধুরা একসাথে বা দলবেঁধে (ট্যুর অপারেট করে) গেলে ডরমেটরি বেছে নেয়া ভালো।
৫. ব্যাংকের সিল স্বাক্ষরসহ ছয় মাসের স্টেটমেন্ট ও সলভেন্সি সার্টিফিকেট কাগজ সংগ্রহ করুন। সঞ্চয়পত্র বা এফডিআর থাকলে তার সার্টিফিকেট সংগ্রহ করুন। স্থাবর সম্পত্তি থাকলে তার দলিলের কপি জমা দিতে পারেন। এতে আবেদনের সময় মোটা অর্থ দেখাতে পারবেন।
৬. বিবাহিত হলে বিয়ের সনদ সত্যায়িত করে রাখুন।
৭. চাকরিজীবীরা কর্মস্থল থেকে অনাপত্তিপত্র (নো অবজেকশন সার্টিফিকেট) সংগ্রহ করে নিন। এটি ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়।
৮. অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট কিংবা বাসের টিকেট আগাম বুকিং দিন। ইউরোপের বিভিন্ন শহরে কম ভাড়ায় বাস ও বিমান চলাচল করে। সেখানে ট্রেনে চলাচল ব্যয়বহুল। তাই ট্রেনে চলাচল এড়িয়ে চলা ভালো।
৯. স্বনামখ্যাত বীমা প্রতিষ্ঠান থেকে ট্রাভেল হেলথ ইন্স্যুরেন্স করিয়ে নিন। ইউরোপ ভ্রমণের জন্য এটি অবশ্যই প্রয়োজন হবে। তবে মনে রাখতে হবে বাংলাদেশে শেনজেন ভিসার বীমা প্রদানের জন্য শেনজেন কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত নির্দিষ্ট কিছু ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি রয়েছে।
১০. আবেদন করার আগে দেখে নিন আপনার পাসপোর্টের মেয়াদ শেনজেনভূক্ত দেশ থেকে ফেরার যে তারিখ উল্লেখ করবেন তারপর কমপক্ষে ছয়মাস আছে কিনা। না থাকলে পাসপোর্ট নবায়ন করে নিন।
১১. আবেদনের তিনমাসের মধ্যে তোলা নির্ধারিত মাপের দুই কপি ছবি লাগবে।
১২. ভারত, নেপাল ও পাকিস্তান ছাড়া কমপক্ষে তিনটি দেশ ভ্রমণ আপনার ভিসা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা দিবে। অব্যবহৃত পাসপোর্ট জমা দিলে ভিসা নাও পেতে পারেন।
১৩. যদি শিশু সন্তান থাকে তবে তার নাম এন্ট্রি হবে মায়ের সাথে। কিন্তু মায়ের সাথে সন্তান ভ্রমণে যাবে এ বিষয়ে বাবার কাছ থেকে একটি অনাপত্তিপত্র সাথে জমা দেয়া ভালো।
আবেদন করার নিয়ম:
১. নির্দিষ্ট দেশের দূতাবাসের ওয়েবসাইট থেকে (প্রথম যে দেশে যাবেন সেই দেশের) ভিসা আবেদন ফরম ডাউনলোড করে প্রিন্ট দিন এবং নির্ভুলভাবে পূরণ করুন। কোনো ভুল তথ্য দেয়া যাবে না। প্রতিটি ঘর পূরণ করুন। যেসব কাগজে স্বাক্ষর দিতে হবে সেসব কাগজে পাসপোর্টে দেয়া স্বাক্ষরটি দিন।
২. ব্যাংকের কাগজপত্র, হোটেল বুকিং, বীমার কাগজ, ফ্লাইটের বুকিং, আগে যেসব দেশে ভ্রমণ করেছেন সেসব দেশের ভিসার রঙিন কপি ও ছবি আবেদনের সাথে যুক্ত করুন। কোন সভা, সেমিনার বা সম্মেলনে গেলে তার আমন্ত্রণপত্র জমা দিতে হবে।
৩. নির্দিষ্ট দূতাবাসে বা দূতাবাস নির্ধারিত এজেন্সিতে পাসপোর্টসহ আবেদন ফরম জমা দিন। আপনি কবে পাসপোর্ট জমা দিবেন তা অনলাইনে আবেদন করার সময় জানিয়ে দেয়া হবে।
৪. আপনার কাগজপত্র ঠিক থাকলে ভিসা ফি জমা দিন। ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখ থেকে ভিসা ফি ৮০ ইউরো করা হয়েছে।
৫. ভিসা ফি জমা দেয়ার পর ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেয়া হবে।
আবেদন জমা দেয়ার দিন আপনাকে জানিয়ে দেয়া হবে কবে আপনার পাসপোর্ট ফেরত দেয়া হবে। সাধারণত দেশভেদে ১৫ থেকে ২১ দিন সময় নেয়া হয়। নির্ধারিত দিন বা তার আগের দিন আপনার সেলফোনে টেক্সট মেসেজ পাঠিয়ে জানানো হবে আপনার পাসপোর্ট ফেরত আনার বিষয়টি। ভিসা পেলে পাসপোর্টে স্টিকার যেমন লাগিয়ে দেয়া থাকবে, ভিসা না পেলে একটি চিঠির মাধ্যমে আপনাকে জানানো হবে কেনো আপনাকে ভিসা দেয়া হয়নি।
এনআরবি৩৬৫/এএমটি/কিউটি
[প্রিয় পাঠক, NRB365-এ আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাসে আপনার কমিউনিটির নানান খবর, ভ্রমণ, আড্ডা, গল্প, স্মৃতিচারণসহ যে কোনো বিষয়ে লিখে পাঠাতে পারেন। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ছবিসহ ই-মেইল করুন [email protected] এই ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।]
NRB365 ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে:
আর্ট নিউজ ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে: ART News BD Plus